মেছতা কি? কেন হয়, কীভাবে দূর করবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক

মুখের মেছতার সমস্যায় অনেকেরই হয়ে থাকে। বিশেষ করে যেসব নারী ও পুরুষদের বয়স ৩৫ বেশি তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে। এছাড়া যারা ত্বকের যত্নে অবহেলা করেন তাদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা হতে পারে।
পরিস্কার উজ্জ্বল দাগবিহীন ত্বক সবাই চায়। কিন্তু অনেক সময় মুখে ছোপ ছোপ দাগ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মুখে, গালে মেছতার কালো দাগ নিয়ে বিব্রত বোধ করেন অনেকেই।

মেছতা কি?
মেলাসমা বা মেছতা হলো ত্বকের একটি পিগমেন্টেশন ডিসঅর্ডার। বেশিরভাগ সময় নারীরাই আক্রান্ত হয়। সাধারণত শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে গালে এবং মুখে হালকা বা গাড় বাদামী রঙের দাগ দেখা দেয়। এক্ষেত্রে মুখে কালচে ছোপ বা প্যাচ পড়ে, যা মুখের সৌন্দর্য অনেকটাই নষ্ট করে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে মুখ-কপালসহ বুকেও হতে পারে মেছতা।

মেছতা কেনো হয়?
১. বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেছতার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাব, বংশগত কারণ, গর্ভধারণ, হরমোনজনিত সমস্যা ইত্যাদি কারণে মেছতা হয়ে থাকে।

২. সাধারণত ত্বকের কোন অংশ যদি দীর্ঘসময় রোদের ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মির সংস্পর্শে আসে সেখানে মেছতা দেখা দেয়।

৩. মুখে, গলায়, ঘাড়ে, পিঠে একধরনের মেছতার মতো কালো দাগ হয়, একে বলে অ্যাকান্থোসিস নিগ্রিকান্স। স্থূলতা থাকলে বা পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে এই ধরনের কালো দাগ পড়তে পারে।

৪. এ ছাড়া বেশি কসমেটিক্স, রাসায়নিক দেওয়া ক্রিম মুখে ব্যবহার করলে একধরনের গুটি গুটি কালো দাগ হয় সারা মুখে। একে বলে পিগমেন্টেড কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস। বিশেষ করে প্রসাধনী থেকে এমন ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়।

৫. হাই ব্লাড প্রেসারের ওষুধ, ডায়াবেটিসের ওষুধ বা বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াতেও অনেক সময় মেছতার মত এমন দাগ হতে পারে।

মেছতা দূর করার উপায়
জেনে রাখা ভালো মেছতার দাগ দ্রুত যায় না। এর পেছনে সময় দিতে হবে এবং ধৈর্য রাখতে হবে।

১. প্রথমেই মেছতার কারণ খুঁজতে হবে। কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে সে ওষুধ বন্ধ করতে হবে বা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। এ ছাড়া হরমোনজনিত সমস্যা হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

২. মেছতার দাগ কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিমেলামাইজিং ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। দাম অনেক বেশি হলে রয়েছে লেজ়ার ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা।

৩. সরাসরি সূর্যের আলোর প্রভাব থেকে ত্বককে মুক্ত রাখতে হবে। রোদে গেলে ত্বক ঢেকে রাখতে হবে। এছাড়া ভালো মানের সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।

৪. আপেল সাইডার ভিনেগারের সঙ্গে দু’চামচ পানি মিশিয়ে তুলো দিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে নিন। ২০-৩০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এতেও উপকার হবে।

ঘরোয়া উপায়ে মেছতা দূর
তবে মেছতা হওয়ার অন্যতম কারণ অপরিচ্ছন্ন ত্বক। আসুন জেনে নেই ঘরোয়া উপায়ে মেছতা দূর করা ও ত্বক পরিষ্কার করার উপায়।

লেবু
ত্বককে উজ্জ্বল করতে ও ত্বকের কালো দাগ দূর করতে লেবু ব্যবহার করতে পারেন। লেবু রসে উচ্চমাত্রার সাইট্রিক এসিড থাকায় লেবু ব্যবহারের ফলে ত্বকের অধিক তেল শোষণ করে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

১৫ থেকে ২০ মিনিট
মেছতা ও দাগমুক্ত ত্বকের জন্য তাজা লেবুর রস ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এটি প্রতিদিন অথবা সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করুন।

লেবু ও টমেটো
এক চা চামচ লেবুর রসের সঙ্গে এক চা চামচ টমেটোর রস মিশিয়ে এটি ত্বকে লাগিয়ে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এক মাস এটি করলে ত্বকের মেচতা দূর হবে।

টমেটো
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ টমেটোর রস ত্বকের কালো দাগ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। তাই টমেটোর পাল্প ত্বকে ম্যাসাজ করে ১০ থেকে ১৫ মিনিট এবং ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রতিদিন অথবা সপ্তাহে তিন- চার দিন ব্যবহার করুন।

আলু
আলুর রস মেচতার দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এটি চোখের চার পাশে জমে থাকা কালো দাগ (ডার্ক সার্কেল) দূর করতে সাহায্য করে।

মুলতানি মাটি
মুলতানি মাটি ত্বকের মরা কোষ পরিষ্কার করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের এক্সট্রা অয়েল শুষে নিয়ে ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করে।

গোলাপজল, সবুজ চা, শসার রস
গোলাপজল, সবুজ চা, শসার রস, লেবুর রস এবং পানি ও মুলতানি মাটির মিশ্রণটি তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

এক চা চামচ টমেটোর রস এবং চন্দন গুঁড়া, দুই চা চামচ মুলতানি মাটি একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটা সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করতে পারেন।

অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা জেল ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। সম্পূর্ণ জেল ত্বকে শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দু’বার ব্যবহার করতে পারেন।অ্যালোভেরা জেল দুই চা চামচ, এক চা চামচ লেবুর রস এবং চিনি একসাথে মিশিয়ে হালকাভাবে ত্বকে ঘষুন। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এটি ব্যবহার করুন।

স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরি উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, হাইড্রোক্সি এসিড, স্যালিলিক এসিড, অ্যালিজিক এসিড সমৃদ্ধ। এটি ত্বকের মরা কোষ দূর করে, দাগ, একনে এবং ত্বক ফাটা থেকে রক্ষা করে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.