অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন

স্পোর্টসবিজ ডেস্ক

আজ (রোববার) আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম পরিণত হয়েছিল নীলের মহাসমুদ্রে। নিজ দেশে এক যুগ পর বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরবেন রোহিত শর্মারা, এমন স্বপ্নেই বিভোর ছিলেন শত কোটি ভারতীয় সমর্থক। সেই কক্ষপথেই ছিল দলটি। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন ট্রাভিস হেড আর মার্নাস ল্যাবুশেন। শুরুতে ৩ উইকেট পড়ার পর এই দুজনই ধীরে ধীরে ভারতের কাছ থেকে ম্যাচটাকে নিয়ে যান অনেক দূরে। শেষ পর্যন্ত তারাই গড়ে দিলেন ব্যবধান। ভারতের দেওয়া ২৪১ রানের টার্গেট অস্ট্রেলিয়া ছুঁয়ে ফেলল ৪২ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে।

ফাইনালে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়েছিল ভারত। অবশ্য রোহিত শর্মার ইচ্ছাও ছিল টস জিতলে ব্যাটিং নেওয়ার। কিন্তু ব্যাট হাতে ভারতীয়দের সেই আত্মবিশ্বাস আজ দেখা যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের আগুনে বোলিংয়ের সামনে প্রত্যাশিত ব্যাটিং হয়নি ভারতের। ফাইনালের পিচও ব্যাটিং সহায়ক ছিল না। অসমান বাউন্স দারুণ ভুগিয়েছে রোহিত শর্মাদের।

বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য খুব বড় ছিল না, ২৪১ রানের। তবে ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়েছিল কামিন্সের দল। মোহাম্মদ শামি-জাসপ্রিত বুমরাহদের বোলিং তোপে ৪৭ রান তুলতেই তারা হারিয়ে বসে ৩ উইকেট।

সেখান থেকে ট্রাভিস হেড আর মার্নাস লাবুশেন ২১৫ বলে ১৯২ রানের জুটিতে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসেন। জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে মোহাম্মদ সিরাজের বলে আউট হন হেড। ১২০ বলে ১৩৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসে ১৫টি চার আর ৪টি ছক্কা হাঁকান বাঁহাতি এই ব্যাটার।

হেডকে দারুণ সাপোর্ট দেওয়া লাবুশেন ১১০ বলে ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন। জয়সূচক দুই রান আসে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট থেকে।

অথচ রান তাড়ায় দলীয় ১৬ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ৩ বলে ৭ করে মোহাম্মদ শামির বলে খোঁচা দিতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ হন ডেভিড ওয়ার্নার। ১৫ বলে ১৫ করে মিচেল মার্শ হন জাসপ্রিত বুমরাহর শিকার। উইকেটরক্ষক নেন ক্যাচ।

এরপর মাত্র ৪ রান করে স্টিভেন স্মিথও বুমরাহর বলে এলবিডব্লিউ হলে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। যদিও স্মিথ আউট ছিলেন না। বল বাইরে পিচ করেছিল। কিন্তু আম্পায়ার আউট দিলে আর রিভিউ নেননি স্মিথ।

এর আগে বিরাট কোহলি আর লোকেশ রাহুলের লড়াকু ফিফটির পরও পুরো ৫০ ওভার খেললেও ২৪০ রানে গুটিয়ে গেছে ভারতের ইনিংস।

এবারের বিশ্বকাপে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামা মানেই ভারতের ঝোড়ো সূচনা। ব্যত্যয় ঘটেনি ফাইনালেও। শুরুতে ওপেনার শুভমান গিলের (৭ বলে ৪) উইকেট হারিয়ে ফেললেও ঝোড়ো গতিতে রান তুলেছে ভারত।

রোহিত মারকুটে ভঙ্গিমায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ছিলেন হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায়। তবে ৩১ বলে ৪৭ করার পর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত এক ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় ভারতীয় অধিনায়ককে। এরপরই ভারতকে চেপে ধরে অস্ট্রেলিয়া।

১০ ওভারে ২ উইকেটে ৮০ রান ছিল। এরপর টানা ১৬ ওভার কোনো বাউন্ডারি পায়নি ভারত। অবশেষে ২৭তম ওভারে এসে সেই বাউন্ডারিখরা কাটান লোকেশ রাহুল।

এর আগে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে টস জিতে বোলিং বেছে নেন অসি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। দলীয় ৩০ রানের মাথায় মিচেল স্টার্ক ফেরান শুভমান গিলকে (৭ বলে ৪)। এরপর কামিন্স দ্রুতই বোলিংয়ে নিয়ে আসেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। তিনি এসেই সাফল্য উপহার দেন অস্ট্রেলিয়াকে। নিজের দ্বিতীয় এবং দলের ১০ম ওভারেই দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন ম্যাক্সওয়েল। সাজঘরে ফেরান রোহিত শর্মাকে।

ওভারের চতুর্থ বলে ম্যাক্সওয়েলকে ভালোভাবে খেলতে পারেননি রোহিত। শট খেলতে গেলেন তিনি। কিন্তু বল ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় অফসাইডে। ট্রাভিস হেড কভার অঞ্চল থেকে পেছনে গিয়ে অসাধারণ একটি ক্যাচ ধরলেন। আউট হয়ে গেলেন রোহিত শর্মা। ৩১ বলে ৪৭ রান করলেন তিনি। দলীয় ৭৬ রানের মাথায় পড়লো দ্বিতীয় উইকেট।

এরপর ব্যাট করতে নামেন শ্রেয়াস আয়ার। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু একটি বাউন্ডারি মেরে তিনিও ফিরে গেলেন। প্যাট কামিন্সের বলে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আয়ার। ৮১ রানের মাথায় পড়ে তৃতীয় উইকেট।

৮১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর বিরাট কোহলি আর লোকেশ রাহুল খোলসে ঢুকে পড়েন। দলকে এগিয়ে নিতে দাঁতে দাঁত চেপে ক্রিজে পড়ে থাকার চেষ্টা করেন তারা। চতুর্থ উইকেটে ১০৯ বল খেলে তারা ধীরগতিতে যোগ করেন ৬৭ রান।

অবশেষে এই জুটিটি ভেঙে দেন প্যাট কামিন্স। ভারতীয় দলের ব্যাটিং ভরসা বিরাট কোহলি তার দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ইনসাইডেজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন। ৬৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে কোহলির দায়িত্বশীল ইনিংসটি ছিল ৫৪ রানের।

রবীন্দ্র জাদেজা সুবিধা করতে পারেননি। ২২ বলে ৯ রান করে হ্যাজেলউডের বলে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দেন তিনি। ১৭৮ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত।

সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছেন লোকেশ রাহুল। বেশ ধীরগতিতে ব্যাটিং করেছেন তিনি। অবশেষে ধীরগতির রাহুলকে সাজঘরের পথ দেখান মিচেল স্টার্ক।

৬৬ রান করে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রাহুল। ১০৭ বলের ইনিংসে মাত্র একটি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। এরপর মোহাম্মদ শামিকেও (৬) সাজঘরে ফেরান স্টার্ক। ২১১ রানে ৭ উইকেট হারায় ভারত।

এরপর আর বেশিদূর এগোতে পারেনি ভারত। শেষ স্বীকৃত ব্যাটার সূর্যকুমারের ওপর ভরসা ছিল। তিনিও ২৮ বলে ১৮ রান করে সাজঘরে ফিরে যান।

ইনিংসের শেষ বলে মোহাম্মদ সিরাজ দুই নিতে গেলে রানআউটের কবলে পড়েন কুলদ্বীপ যাদব। তাতেই ২৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত।

অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ৩টি, প্যাট কামিন্স আর জস হ্যাজেলউড নেন ২টি করে উইকেট।

Leave A Reply

Your email address will not be published.