বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে আফগানদের অঘটন

স্পোর্টসবিজ ডেস্ক

বিশ্বকাপের চলতি আসরের ১৩তম ম্যাচে আজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে আফগানিস্তান।

গত ১৫ অক্টোবর ভারতের দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমে বাট করে ২৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে আফগানিস্তান। টার্গেট তাড়ায় ২১৫ রানে অলআউট হয়ে ৬৯ রানে ম্যাচ হারে ব্রিটিশরা।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এই প্রথম জয়ের স্বাদ পেল আফগানিস্তান। এই জয় আফগানদের জন্য বিশ্ব জয়ের মতো। তাদের সেরা জয়গুলো মধ্যে অন্যতম সেরা।

টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৯ ওভার ৫ বলে ২৮৪ রান তুলে অলআউট হয় আফগানিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮০ রান করেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। ইংল্যান্ডের হয়ে ৪২ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন আদিল রশিদ।

জবাবে ৪০ ওভার ৩ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২১৫ রান তুলতে সমর্থ হয় ইংল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেছেন হ্যারি ব্রুক। ৬৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে বড় ধাক্কা খেল ইংলিশরা।

লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই হোঁচট খায় ইংল্যান্ড। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ফজল হক ফারুকির বলে লাইন মিস করে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন জনি বেয়ারস্টো। এই ওপেনার অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন তবে বাঁচতে পারেননি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা জো রুট উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তিনে নেমে ফিরেছেন দ্রুতই। সপ্তম ওভারে মুজিবের গুগলিতে বোল্ড হয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৭ বলে ১১ রান।

আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ডেভিড মালান আজও শুরুটা দুর্দান্ত করেছিলেন। যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন সাবলীল ছিলেন। ১৩তম ওভারে মোহাম্মদ নবির স্টাম্পের ওপরের নিচু হওয়া বলে বোকা বনেছেন। শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৯ বলে ৩২ রান।

টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে দলকে জয়ের পথে রাখার দায়িত্ব পড়েছিল জস বাটলারের ওপর। তবে অভিজ্ঞ এই ব্যাটার পারেননি, উল্টো দলের চাপ বাড়িয়েছেন। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাভিন উল হককে সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন বাটলার। ৯ রান করে এই উইকেটকিপার ব্যাটার ফেরায় একশ’র আগেই ৪ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।

ছয়ে নেমে বাটলার-রুটদের পথেই হেটেছেন লিয়াম লিভিংস্টোন-স্যাম কারানরা। উইকেটে এসে থিতু হয়েছেন ঠিকই কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১০ রান করে রশিদের গুগলিতে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছেন লিভিংস্টোন। একই রানে থেমেছেন কারানও।

ব্যাটারদের এমন আসা-যাওয়ার মিছিলেও এক প্রান্তে ইংল্যান্ডের আশার আলো হয়ে জ্বলছিলেন হ্যারি ব্রুক। তবে ৩৫তম ওভারে এই ব্যাটারকে থামিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন মুজিব। ৬৬ রান করে ব্রুক ফেরার পর আর বেশিক্ষণ টিকেনি ইংল্যান্ডের ইনিংস। আদিল রশিদ-মার্ক উডরা কেবল ব্যবধান কমিয়েছেন।

আফগানিস্তানের হয়ে সমান ৩টি করে উইকেট শিকার করেছেন রশিদ খান ও মুজিব উর রহমান।

এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে উড়ন্ত শুরু পায় আফগানিস্তান। দুই ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও রহমানুল্লাহ গুরবাজের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সামনে পাত্তাই পায়নি ইংলিশ বোলাররা। বিশেষ করে গুরবাজ রীতিমতো ঝড় তুলেন। ব্যক্তিগত ফিফটি পেতে তিনি খরচ করেছেন মাত্র ৩৩ বল।

গুরবাজকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন ইব্রাহিম। তবে তিনি বেশি দূর যেতে পারেননি। ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে আদিল রশিদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি এই ওপেনার। বল চলে যায় শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা জো রুটের হাতে। ২৮ রান করে ইব্রাহিম ফেরায় ভাঙে ১১৬ রানের উদ্বোধনী জুটি।

তিনে নেমে সুবিধা করতে পারলেন না রহমত শাহ। এই টপ অর্ডার ব্যাটার স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়েছেন। আদিল রশিদকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেছেন। উইকেটের পেছনে বাটলার স্টাম্প ভাঙতে খুব একটা সময় নেননি। রহমতের ব্যাট থেকে এসেছে ৩ রান।

রহমত ফেরার পরের বলে ফিরেছেন গুরবাজও। এই ওপেনার খানিকটা আক্ষেপ করতেই পারেন-শুরু থেকে ছন্দে ছিলেন, সেঞ্চুরির পথে হাটছিলেন। তবে ভাগ্য তার সঙ্গে ছিল না! কাটা পড়েছেন রান আউটে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৭ বলে ৮০ রান।

এরপর আজমতউল্লাহ ওমরজাই-হাশমতউল্লাহ শাহিদিরা ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে দুর্দান্ত ছিলেন ইকরাম আলিখীল। তিনি ব্যক্তিগত ফিফটির দেখা পেয়েছেন। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৮ রান।

লোয়ার মিডল অর্ডারে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন রশিদ খান-মুজিব উর রহমানরা। রশিদের ব্যাট থেকে এসেছে ২৩ রান, মুজিব ফিরেছেন ২৮ রান করে। সবমিলিয়ে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যই দাঁড় করায় আফগানরা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.