ভালোবেসে বিয়ে, অতঃপর…

লাইফস্টাইল ডেস্ক

দীর্ঘ ছয় বছর প্রেম করে বিয়ে করেছেন তপু ও কনা। কিন্তু বিয়ের পর মাস না পেরোতেই দুজনের বোঝাপড়ায় সমস্যা হতে শুরু করে। সেই সমস্যা এক সময় প্রকট আকার ধারণ করে। ছয় বছরের সম্পর্ক বিয়ের ছয় মাসের মধ্যেই বিচ্ছেদে গিয়ে গড়ায়। কেন হয় এমনটা?

প্রেম করার জন্য শুধু প্রেমই প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিয়ের পর সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রেমের পাশাপাশি আরও অনেক কিছু ছাড় দিতে হয় দুপক্ষকেই। জেনে নিন কেন বিয়ের পর বোঝাপড়ায় সমস্যা শুরু হয়।

স্বাধীনতায় ভাটা পড়া
বিয়ের আগে হয়তো বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুদের দঙ্গে আড্ডা দেওয়া হতো দেদার। বিয়ের পর অধিকারবোধ বেড়ে যাওয়ায় সঙ্গী ব্যাপারটা ভালোভাবে নিতে পারছে না। এমনটা ঘটতে পারে স্বামী কিংবা স্ত্রী দুজনের সঙ্গেই। এক্ষেত্রে স্বাধীনতায় ছেদ পড়ার বিষয়টা অনেকেই ভালোভাবে মেনে নিতে পারেন না।

হঠাৎ বাস্তবতার হানা
প্রেমের সময়টা কাটে প্রজাপতির ডানায় ভর করে। এ সময় সবকিছুই রঙিন মনে হয়। ভালোবাসার মানুষটির ইতিবাচক দিকটিই কেবল চোখে পড়ে। কিন্তু বিয়ের পর তার মন্দ দিকগুলোও ধীরে ধীরে চোখে পড়তে শুরু করে। কারণ একই ছাদের নিচে থাকার সুবাদে মানুষটিকে আরও গভীরভাবে চেনার সুযোগ হয়। সঙ্গীর মন্দ দিকগুলো অনেকেই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেন না। ফলে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে।

ভুল বোঝাবুঝি বাড়তে থাকা
ভুল বোঝাবুঝি বাড়তে থাকলে নিজেদের মধ্যে মানসিক যোগাযোগ কমতে থাকে। যোগাযোগে ভাঙ্গন ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে সম্পর্কে। একে অপরের কথা শোনা, বোঝার চেষ্টা করা এবং উদ্বেগ ও দ্বন্দ্ব সমাধানের ইচ্ছা থাকা খুব জরুরি। মানসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সম্পর্ক কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

পারিবারিক কলহ
নতুন পরিবারে মানিয়ে নিতে অনেকেরই সমস্যা হয়। বিশেষ করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতা না পেলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়ে স্ত্রীর জন্য। এমন অবস্থায় স্বামী যদি স্ত্রীকে প্রত্যক্ষ ও কার্যকরভাবে সাপোর্ট না দিতে পারে, তবে অনেক সময়ই সম্পর্ক বিচ্ছেদে গিয়ে গড়ায়।

কোয়ালিটি টাইমের অভাব
কাজ, পরিবার ও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যস্ততার কারণে ধীরে ধীরে নিজেদের অর্থপূর্ণ মুহূর্তগুলো হারিয়ে যেতে থাকে। নিজেরা কোয়ালিটি টাইম না কাটালে ক্রমশ মানসিক যোগাযোগ কমতে থাকে নিজেদের মধ্যে।

আর্থিক অসঙ্গতি
বিয়ের পর আর্থিক অসঙ্গতি বিরূপ প্রভাব ফেলে সম্পর্কে। হয়তো অন্য কেউ জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে দামি উপহার পাচ্ছেন, বিয়ের এমন এমন উপহার কেন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না এটা ভেবে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন। অনেকে আবার স্ত্রীর উপার্জন বেশি হলে সেটা নিয়ে ভোগেন অসন্তোষে।

বিয়ের পর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবে এই ৪ বিষয়!
সদ্য বিবাহিতদের জন্য এ বিষয়ে জেনে নেয়া খুবই জরুরি। প্রেম কিংবা পারিবারিকভাবে হয়তো বিয়ে হয়েছ, কিন্তু সেই বিয়ে টেকানোর দায়িত্ব আপনার। অন্যথায় জীবনের এই রঙিন মুহূর্তে কিন্তু প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেললে সেই ব্যথা কাটিয়ে ওঠতে প্রচুর সময় লাগবে। নতুন বিয়ে বা বিয়ের বয়স যতোই হোক না কেন, সঙ্গীকে সময় না দিলে বা অবহেলা করলে সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হবে।
যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন বিবাহিত জীবন মধুর করে গড়ে তুলতে দুজনকেই কিছু কিছু সময় বের করতে হবে। বিয়ের পর সঙ্গীকে কোনও কথা বলতে লজ্জা পাওয়া যাবে না। এখন সঙ্গীই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই নিজের কিংবা সংসারের ভালো-মন্দ সব বিষয়ে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গেই আলোচনা করতে হবে। এবার তাহলে বিয়ের পর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার বিষয়ে জেনে নেয়া যাক-

১. অফিস থেকে বাসায় ফিরেই সরাসরি খাবার টেবিলে গিয়ে বসবেন না। ফ্রেশ হয়ে হাতে এক কাপ কফি বা চা নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে সারাদিনের ব্যস্ততা বা খুঁটিনাটি নিয়ে একটু কথা বলুন। এছাড়া আপনাকে ছাড়া সারাদিন কিভাবে কাটল তার সেটাও জানুন। এতে করে সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষে ধুয়ে যাবে।

২. বিয়ের পর শারীরিক চাহিদা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঙ্গীর সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলুন। প্রতিটি মানুষেরই গোপন কিছু ফ্যান্টাসি থাকে, যা কেবল তার সঙ্গীর সঙ্গেই আলোচনা করা যায়। এছাড়া বিছানায় আপনার কোনও ব্যবহারে সে কষ্ট পেলে তা জানুন। শারীরিক সম্পর্ক শুধু শরীরকে মজবুত করে না, সেই সঙ্গে মানসিক শান্তি প্রদানের মাধ্যমে মানসিকতাও মজবুত করে তোলে।

৩. সঙ্গী কী বলতে চায় তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আপনার প্রতি তার অধিকার রয়েছে। এটাকে খারাপভাবে না দেখে ভালোভাবে দেখুন। জীবন সুন্দর হবে। কেননা, একমাত্র বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ থাকে না যার কাছে অভাব-অভিযোগ কিংবা কোনও দাবির কথা জানানো যায়। দুজনে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করুন।

৪. বিশেষ কোনও দিন বা সময়কে স্মৃতিময় করে তুলতে সঙ্গী যেভাবে চেষ্টা করছে সে জন্য তাকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানান। সে কী জন্য আপনার কাছে এতো সুন্দর এ কথা তাকে বলুন। এতে করে তার সম্মান বাড়বে। তিনিও আপনার প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা দেখাবে। আর এভাবে সম্পর্ক হবে মধুময়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.