গ্লোবালবিজ ডেস্ক
ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য অনেকেই ভাবছেন আয়ের একটা অংশ সঞ্চয় করবনে। কোথায় জমাবেন এ অর্থ। কেমন পাবেন সুদ বা মুনাফা। আছে নিরাপত্তার বিষয়। এ ক্ষেত্রে কষ্টার্জিত অর্থ কোন ব্যাংকে রাখলে একটু বেশি মিলবে মুনাফা তার খোঁজে থাকেন সঞ্চয়কারীরা।
প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখাই মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প বা ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম)। ডিপিএস নামে বহুল প্রচলিত হলেও বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে এর ভিন্ন ভিন্ন নাম। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডিপিএসের বিপরীতে গ্রাহককে মাসিক, ত্রৈমাসিক, ছয় মাসিক ও বাৎসরিক সুদ দিয়ে থাকে।
এছাড়া সর্বনিম্ন তিনমাস থেকে তিন বছর বা তারও বেশি সময়ের জন্য ব্যাংকগুলোতে সঞ্চয় করার সুযোগ রয়েছে। এসব সঞ্চয়ের বিপরীতে ব্যাংক যে সুদ দেয়, তার নাম ফিক্সড ডিপোজিট রেট বা স্থায়ী আমানতে সুদের হার (এফডিআর)।
তবে যারা বেতনভোগী অর্থাৎ প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট আয় রয়েছে, তাদের জন্য সেভিংস অ্যাকাউন্ট লাভজনক। অন্যান্য অ্যাকাউন্টের মতো সেভিংস অ্যাকাউন্টেও সুদের সুবিধা রয়েছে। ব্যাংকগুলো এসব হিসাবে থাকা ব্যালেন্সের ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক সুদ বা মুনাফা দিয়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ সেপ্টেম্বর মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি সব মিলিয়ে ৬০টির ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে সবার সুদ বা মুনাফার হার এক নয়। বিভিন্ন মেয়াদে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত এফডিআরে সুদ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের মোট ৯টি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকগুলোতে এফডিআরে বিভিন্ন মেয়াদে গ্রাহককে আড়াই থেকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ অফার করছে। সাধারণ ডিপোজিটে ৩ দশমিক ৫০ থেকে ৪ শতাংশ সুদ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। ছয় মাস থেকে এক বছরের কম সময়ের সুদ ৬ দশমিক ১৫ থেকে এক বছর থেকে তিন বছরের কম সময়ের জন্য ৬ দশমিক ২৫ থেকে ৭ শতাংশ।
এছাড়া সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, জনতা, বেসিক, বিডিবিএল, পিকেবি ও বিকেবির সুদ ৫ দশমিক ৫০ থেকে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আমানতকারীদের সুদ দিচ্ছি।
বেসরকারি ব্যাংক
বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সাধারণ সঞ্চয়ে ২ থেকে চার শতাংশ সুদ রয়েছে। আর মেয়াদী আমানতে দিচ্ছে ২ থেকে ৪ শতাংশ। তবে কিছু ব্যাংক মেয়াদী আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদও অফার করছে। এ তালিকায় এগিয়ে আছে চতুর্থ প্রজন্মের নতুন ব্যাংকগুলো -সীমন্ত ব্যাংক, মেঘনা, পদ্মা ব্যাংক, ইউনিয়ন, এসবিএসি প্রবাসী উদ্যোক্তাদের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ।
দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা (সাবেক ফারমার্স) ব্যাংক। ব্যাংকটি তিন থেকে ছয় মাস কম সময়ের সুদ ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, ছয় মাস থেকে এক বছরের কম সময়ের জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ এবং একবছর থেকে তার বেশি সময়ের জন্য আমানতের সুদ দিচ্ছে ৭ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ শতাংশ। তিন মাস থেকে তিন বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসএবিসি) ৪ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। এনআরবিসি দিচ্ছি ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।
মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে এবি ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আইএফআইসি, মার্কেন্টাইল, প্রিমিয়ার, উত্তরা ও ন্যাশনালসহ বেশকিছু ব্যাংক।
শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক
দেশের শরিয়াহভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, শাহজালাল, এক্সিম, ইউনিয়ন, আইসিবি ইসলামিক এনআরবি গ্লোবাল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকগুলো গ্রাহককে ৪ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ মুনাফা দিচ্ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. বিভিন্ন মেয়াদি সঞ্চয়ের ওপর মুনাফা দিচ্ছে সাড়ে ৪ থেকে দশমিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত।
বিদেশি ব্যাংক
বিদেশি ব্যাংকগুলো আমানতের ওপর তেমন সুদ দেয় না। এ খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক সাধারণ মেয়াদি আমানতে দশমিক ২৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদ দিচ্ছে।
বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে তিন বছর থেকে তার বেশি সময়ের সবচেয়ে বেশি ৬ দশমক ১৫ থেকে ৫০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। হাবিব ব্যাংকের সুদ সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম সুদ সিটি এনে। ব্যাংকটির আমানতের সুদ হার এক শতাংশের নিচে। স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) মেয়াদি আমানতে সাড়ে ৩ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। এছাড়া এফডিআরে আল ফালাহ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি, ওরি এবং কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলনের সুদের হার দশমিক ০৫ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
আমানতের সুদ কত হওয়া উচিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ (২০২১ সালের ৮ আগস্ট ) আদেশে আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, তিন মাসের মূল্যস্ফীতির গড় করে তার চেয়ে বেশি সুদ দিতে হবে আমানতকারীদের। এই নির্দেশনা মানতে গেলে এখন আমানতের সুদ দিতে হবে কমপক্ষে ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। কারণ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির গড় ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এই তিন মাসের গড় দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ।