ক্রেডিট কার্ডে ডলারের ব্যবহার বেড়েছে

গ্লোবালবিজ ডেস্ক

দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের ডলার ব্যবহার বেড়েছে। কমেছে দেশের ভেতরে লেনদেন ।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সংকটসহ নানা কারণে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারে প্রতি ডলার ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে গ্রাহককে। এখন কার্ডে প্রতি ডলারের মূল্য ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। যেখানে ব্যাংকে প্রতি ডলার ১১৩ টাকা আর খোলাবাজারে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা। ডলারের দামের এ তারতম্যের কারণে বিদেশগামীদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার নেওয়ার আগ্রহ বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে যারা বিদেশে পড়ালেখা-চিকিৎসা বা ভ্রমণের জন্য যাচ্ছেন, তারা নগদ ডলার না কিনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার নেওয়ার দিকে ঝুঁকছেন। এ পদ্ধতি ঝামেলামুক্ত ও খরচ কম হওয়ায় বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুনের তুলনায় জুলাই মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন দেশের ভেতরে প্রায় ৩ শতাংশ কমেছে। তবে, একই সময়ে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সংখ্যা ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই মাসে দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ২ হাজার ৩৪১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের মাস জুনে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দেশের ভেতর লেনদেনে কমেছে ৭২ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

অপরদিকে জুলাইতে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ বেড়েছে। এ মাসে খরচ হয় ৫১১ কোটি টাকা। যা আগের মাসে ছিল ৩৮৮ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডে ডলারের ব্যবহার বেড়েছে ১২৩ কোটি টাকা বা ৩১ দশমিক ৮১ শতাংশ।

চলতি বছরের জুনের তুলনায় জুলাই মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন দেশের ভেতরে প্রায় ৩ শতাংশ কমেছে। তবে, একই সময়ে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সংখ্যা ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে
ব্যবহারকারীরা জানান, ক্রেডিট কার্ড এখন বিলাসবহুল কোনো বিষয় নয়, প্রয়োজনীয় একটি অনুষঙ্গ। এই কার্ডে ব্যাংকের বুথ থেকে নগদ টাকা তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পণ্যের কেনাকাটা ও সেবার মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে। প্রয়োজনে সহজে মিলছে ঋণ। কেউ জানতেও পারছে না। সুদ ছাড়া টাকা শোধ দিতে ৪৫ দিন পর্যন্ত মিলছে সময়। মানুষের এখন তাৎক্ষণিক টাকার চাহিদা মেটাতে পারছে। শুধু দেশের ভেতরে নয়, বিদেশে গিয়েও এসব কার্ডে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন করার সুযোগ রয়েছে। ফলে মানুষের আগ্রহের পাশাপাশি কার্ডের প্রতি বাড়ছে নির্ভরশীলতা।

এদিকে ক্রেডিট কার্ড সেবাকে জনপ্রিয় করে তুলতে নানা ছাড় ও সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রথম বছরে ফ্রি সেবা, নির্দিষ্টসংখ্যক লেনদেনে প্রতি বছর বাড়তি চার্জ মওকুফ, রিওয়ার্ড পয়েন্ট সুবিধা, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য কেনাকাটায় বিশেষ ছাড়, হোটেলে থাকা ও খাওয়াসহ নানা অফার। এর ফলে দেশে এখন ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বেড়ে সাড়ে ২২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মাসে দুই হাজার কোটি টাকার উপরে লেনদেন হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। যা মোট লেনদেনের ৩০ দশমিক ৮২ শতাংশ। এছাড়া ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ খুচরা আউটলেট পরিষেবায়, ওষুধ ও ফার্মেসিতে ১১ দশমিক ৯৩, পোশাক কেনাকাটায় ৯ দশমিক ৪৬, ট্রান্সপোর্টেশনে ৭ দশমিক ৮৪ এবং নগদ অর্থ উত্তোলনে ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ লেনদেন হয়েছে।

জুলাইতে দেশের বাইরে লেনদেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার হয়েছে ভারতে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ১৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, সৌদি আরবে ৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৪৭ কোটি ২০ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ২২ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। এছাড়া যুক্তরাজ্যে ৬ দশমিক ৯২, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬ দশমিক ১১, কানাডায় ৫ দশমিক ৩১, মালয়েশিয়ায় ৪ দশমিক ৪৮, নেদারল্যান্ডসে ২ দশমিক ৩৫, আয়ারল্যান্ডে ২ দশমিক ৩৫, অস্ট্রেলিয়ায় ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশে এসে বিদেশি নাগরিকরাও তাদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করছেন। তবে জুলাই মাসে দেশে বিদেশিদের এ পদ্ধতিতে লেনদেন কমেছে। ওই মাসে ১৯১ কোটি টাকা খরচ করেছেন তারা। আগের মাসে এর পরিমাণ ছিল ১৯৫ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৪ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ১১ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুলাইতে দেশে সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেছেন। যা ২৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা, তাদের ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ১৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, ভারতীয় ১০ দশমিক ১৪, জাপানিজ ৪ দশমিক ১৫, হংকংয়ের ৩ দশমিক ৬৫ এবং কানাডীয় ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.