আস্থার সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাত

গ্লোবালবিজ ডেস্ক

ব্যাংকের মতোই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই)। তবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের কিছু প্রতিষ্ঠানের লুটপাট নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এ খাতের ওপর সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে পুরো খাত আস্থার সংকটে ভুগছে। এর ফলে ব্যাংকের পাশাপাশি এনবিএফআই যে উদ্দেশ্য নিয়ে খোলা হয়েছে, তা পিছিয়ে পড়েছে। আর তাই এ খাতের আস্থার সংকট নিরসনের লক্ষ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে এ খাত-সংশ্লিষ্টরা।

খাত-সংশ্লিষ্টরা জানান, অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে এ খাত থেকে মানুষের আস্থা চলে গেছে। কারণ আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারেনি। তাই আস্থা ফেরাতে করপোরেটের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, জবাবদিহিতা বাড়ানো, রেগুলার রিপোর্টিং করা এবং ম্যানেজমেন্টের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এছাড়া আস্থা তৈরি করার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের কাছে সেবা নিয়ে যাচ্ছি। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীর কাছে নতুন নতুন পণ্য নিয়ে যাচ্ছি। তাই আমরা আশা করছি আগামীতে এ খাতের ওপর মানুষের পুরোপুরি আস্থা ফিরে আসবে। আমরা সে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।

এসব উদ্যোগের ফলে ইতোমধ্যে বেশকিছু অগ্রগতি হয়েছে এ খাতে। বাকি কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়ে এগোচ্ছে খাত-সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, বেশিরভাগ এনবিএফআইয়ের প্রধান ব্যবসা লিজিং বা ইজারা দেয়া। এছাড়া মেয়াদি ঋণ, হাউজিং ফিন্যান্স, মার্চেন্ট ব্যাংকিং, ইকুইটি ফিন্যান্সিং ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফিন্যান্সিংয়ে বৈচিত্র্য আনছে এনবিএফআইগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত কিছুটা কমেছে। তিন মাসের ব্যবধানে দেশের এনবিএফআইগুলোর সংগৃহীত আমানত শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। গত জুন শেষে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। এর তিন মাস আগে এনবিএফআইগুলোর সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ২৭২ কোটি টাকা।

তবে আলোচিত তিন মাসের ব্যবধান আমানত কমলেও এনবিএফআইগুলোর বিতরণ করা ঋণ বেড়েছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০২২ সালের জুন এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা ঋণ সুবিধার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগে ঋণের স্থিতি ছিল ৬৮ হাজার ৯১০ কোটি টাকা।

এছাড়া বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে বেসরকারি খাতের ঋণ ছিল ৫৯ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। আর সরকারি ঋণ ৯ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। ২০২২ সালের মার্চ শেষে বেসরকারি ঋণ ছিল ৫৯ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। আর সরকারি ঋণ ছিল ৯ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুযায়ী, এনবিএফআইগুলোর সংগৃহীত আমানতের ৯১.৭৫ শতাংশই ঢাকা বিভাগের ভেতরের শাখাগুলোতে রয়েছে। এরপরেই বরিশালে আছে ৪.৩৬ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি ঋণ গেছে শিল্প খাতে, প্রায় ৩৯ শতাংশ। ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতে ২২.১২ শতাংশ, ভোক্তাঋণ ১৫.৪০ শতাংশ, নির্মাণ খাতে ১৪.৩৮ শতাংশ, যোগাযোগ খাতে ২.৪২ শতাংশ, কৃষিতে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে বাকি প্রায় ৬ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

আমানতের মতো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে আছে ঢাকা বিভাগ। ৮৪.৩৪ শতাংশ ঋণই ঢাকা বিভাগের ভেতরের শাখাগুলোতে রয়েছে। এর পরেই চট্টগ্রামে ১০.১৫ শতাংশ।

বর্তমানে দেশে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের দেশজুড়ে শাখা রয়েছে ৩০১টি। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ২৭৭ এবং গ্রামাঞ্চলে ২৪টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি সরকারি এনবিএফআইয়ের শাখা রয়েছে ৫৬টি। বেসরকারি ৩১টি এনবিএফআইয়ের শাখা রয়েছে ২৪৫টি। বিভাগের হিসাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঢাকায় ১৭১টি, চট্টগ্রামে ৪৫টি, খুলনায় ১৬টি, রাজশাহীতে ২০টি, বরিশালে পাঁচটি, সিলেটে ১৯টি, রংপুরে ছয়টি ও ময়মনসিংহে ১৯টি শাখা রয়েছে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের এমডি ও সিইও মো. কায়সার হামিদ বলেন, অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে এ খাত থেকে মানুষের আস্থা চলে গেছে। কারণ আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারেনি। তাই আস্থা ফেরাতে করপোরেটের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, জবাবদিহি বাড়ানো, রেগুলার রিপোর্টিং করা এবং ম্যানেজমেন্টের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীর কাছে নতুন নতুন পণ্য নিয়ে যেতে হবে। যদি এসব না প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে এখান থেকে বের হওয়া সম্ভব না।

তিনি বলেন, কতিপয় গোষ্ঠী বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করেছে। এরা পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় ঢুকে লোন বের করে অনিয়ম করেছে। অনেকটা সময় ধরে তারা এ কাজ করেছে। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সহজে শাস্তির আওতায় আনা ও সম্পদ বাজেয়াপপ্ত করা উচিত। তাদের জাতীয়ভাবে খেলাপি চিহ্নিত করে নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব সুবিধা দেয়া হয়, তা বন্ধ করে দেয়া উচিত। ভবিষ্যতে এটা একটা বড় ধরনের একটা মেসেজ যাবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.