ভবনের উচ্চতা বাড়ানোর কথা ভাবছে রাজউক

গ্লোবালবিজ ডেস্ক
গত ২৩ আগস্ট পরিকল্পিত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ ২০২২-৩৫ গেজেট হওয়ার পর পরই বিভিন্ন মহলে বেশ হইচই পড়ে যায়। বিশেষ করে আবাসন খাতের ব্যবসায়ী এবং ভোক্তারা ড্যাপের ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বারবারই তারা এফএআরের মান বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। যদিও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) তাদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। দায়িত্বশীলরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ীই সাজানো হবে ঢাকা মহানগরকে। তবে সে অবস্থান থেকে সরে আসছে রাজউক। বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এফএআর বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে সংস্থাটির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এজন্য অচিরেই ড্যাপ রিভাইজডের ঘোষণাও দেয়া হবে জানা গেছে।

আবাসন খাতের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন ড্যাপ অনুযায়ী অনুন্নত এলাকায় দুই-তিনতলার ওপরে ভবন নির্মাণ করা যাবে না। আর সেই পরিকল্পনায় মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, পীরেরবাগসহ বেশকিছু এলাকাকে অনুন্নত হিসেবে ধরা হয়েছে। আর গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা, ধানমন্ডির মতো এলাকাগুলোকে ধরা হয়েছে উন্নত অঞ্চল, অর্থাৎ বসবাসের উপযোগী। উন্নত এলাকায় ভবন নির্মাণে এফএআর বেশি পাওয়া যাবে। এফএআরের এ পার্থক্যের কারণে ফ্ল্যাটের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন আবাসন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, যারা মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুরের মতো এলাকায় ৪০ লাখ টাকায় ফ্ল্যাট কিনতেন, তারা আর সেই সুযোগ পাবেন না। কারণ এসব এলাকায় ভবনের উচ্চতা কম হবে। সুতরাং ফ্ল্যাট কিনতে উন্নত এলাকায় ৪-৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে, যা অনেকটা অসাধ্য। এতে ধনীরা আরো ধনী হবে এবং গরিবরা হবে আরো গরিব। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই স্থপতি ইনস্টিটিউট থেকে স্থপতি ও আবাসন ব্যবসায়ী নেতারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও ড্যাপের সভাপতি মো. তাজুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি তুলে ধরেন। সে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ড্যাপ সংশোধন করে কম এফএআর এলাকাগুলোর মান বাড়িয়ে দেয়ার আশ্বাস মেলে। তবে কতটুকু পরিমাণ এফএআর বাড়বে, এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু না জানানো হলেও এক থেকে দেড় পয়েন্ট এফএআর বাড়বে বলে অনুমান করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

রাজউকের একটি সূত্র জানিয়েছে, যেসব এলাকায় এফএআরের মান এক বা দুই আছে ওইসব এলাকায় আরো এক বা দেড়, সর্বোচ্চ দুই বাড়ানোর কথাবার্তা হচ্ছে। তবে এফএআরের মান যে বাড়ছে এটা নিশ্চিত। তবে মেট্রোরেলের স্টেশনকেন্দ্রিক এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন তথা টিওডি ডেভেলপমেন্টের জন্য যে প্রণোদনামূলক এফএআরের মান দেয়া আছে সেটা আরো বাড়ানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। কয়েকটি বিষয় সংশোধনের দাবি জানিয়েছি। এর মধ্যে একটি হলো এফএআরের মান বাড়ানো। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী সাড়া দিয়েছেন। এখন আমরা অংশীজনরা বসে একটি সিদ্ধান্তে আসব। সিদ্ধান্ত শেষে বোঝা যাবে কোথায় এফএআরের মান বাড়বে আর কোথায় কমবে। ঢালাওভাবে বলার সুযোগ নেই—ওমুক এলাকায় এফএআরের মান বাড়ানো হবে। বিশ্লেষণ সাপেক্ষে কোনো কোনো এলাকার এফএআরের মান যেমন বাড়তে পারে আবার অনেক এলাকার এফএআরের মান কমানোও হতে পারে। তাই এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

এফএআরের মান বাড়ানোর ইঙ্গিত পেয়েছেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরাও। এতে তারাও আশার আলো দেখছেন। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, ‘আমরা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন বিদ্যমান এফএআরের সমস্যার সমাধান করবেন। সমাধান হলে আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর বয়ে আনবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

ভবনের উচ্চতা বাড়ানোর কথা ভাবছে রাজউক

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘এফএআরের মান বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়েও আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজউকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমরা বিষয়টি নিয়ে বসেছি। প্ল্যানার ও স্থপতিরা লিখিতভাবে তাদের দাবি জানিয়েছেন। রাজউকের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটা ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হয়েছে। ওই গ্রুপ একটা রিপোর্ট দেবে। সেটি পর্যালোচনা করেই মন্ত্রীর কাছে পেশ করা হবে। আর সেই মিটিংয়ে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত হবে এফএআরের মান বাড়ানো হবে কিনা। এর আগে নিশ্চিত করে কিছু বলার সুযোগ নেই।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.