ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ পরিত্যক্ত

স্পোর্টসবিজ ডেস্ক

ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার পর পরই শুরু হয় বৃষ্টি। মিনিট দশেকের বৃষ্টির পর কভার সরানো হয়। ক্রিকেটাররাও মাঠে নামেন শরীর গরম করতে। আম্পায়াররাও মাঠ পর্যবেক্ষণ করেন। সবকিছু দেখে মনে হয়েছিল মিনিট বিশেকের মধ্যেই খেলা আবারও মাঠে গড়াবে। কিন্তু এমন সময়ই পাল্লেকেল্লেতে আরেক দফায় বেরসিক বৃষ্টি। আর তাতেই দুই চিরপ্রতিপক্ষের লড়াইয়ে জয় হয়েছে বৃষ্টির।

পাল্লেকেল্লেতে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৪৮ ওভার ৫ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৬৬ রান তুলেছে ভারত। যেখানে ৮৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন হার্দিক পান্ডিয়া। তাছাড়া ৮২ রান করেছেন ইশান কিষাণ। পাকিস্তানের হয়ে ৩৫ রানে ৫ উইকেট শিকার করে দিনের সেরা বোলার আফ্রিদি। এরপর বৃষ্টি বাধায় লক্ষ্য তাড়ায় নামতে পারেনি পাকিস্তান। ফলাফল ভাগাভাগি করায় সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান।

সকাল থেকেই কালো মেঘে ঢাকা ছিল পাল্লেকেলের আকাশ। তাতে মন ভার ছিল ক্রিকেটপ্রেমীদেরও। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উড়ে যায় সেই শঙ্কার মেঘ। নির্ধারিত সময়ে হয়েছে টস। সেখানে জয় হয়েছে রোহিত শর্মার। ফলে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক।

ভারত ব্যাটিংয়ে নামার সময়ও আকাশ পরিষ্কার ছিল। দেখে মনে হয়েছে অন্তত কয়েক ঘন্টা আর বৃষ্টি হবে না। কিন্তু ৩০ মিনিটও খেলা হলো না। তার আগেই বৃষ্টির হানা। পঞ্চম ওভার চলাকালেই বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ করতে বাধ্য হন আম্পায়াররা।

বৃষ্টিতে মিনিট ত্রিশেক বন্ধ ছিল খেলা। এরপর খেলা শুরু হলে অসমাপ্ত ওভারের বল করতে আসেন শাহিন আফ্রিদি। ওভারের শেষ বলটি মিডল স্টাম্পের ওপর গুড লেন্থে করেছিলেন। বলে খানিকটা সুইং ছিল। তাতেই পরাস্ত হয়েছেন রোহিত। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২২ বলে ১১ রান।

বৃষ্টিতেই যেন কপাল খুলে পাকিস্তানের। বৃষ্টির আগে চার ওভারের বেশি খেলা হয়েছিল। সেখানে সাবলীল ছিলেন রোহিত-গিল। কিন্তু বৃষ্টির হানার পর প্রথম ওভারেই ফিরেছেন অধিনায়ক। তিনে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না বিরাট কোহলিও। স্টাম্পের বাইরের শর্ট ডেলিভারিতে ইনসাইড এজড হয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি। এই প্রথম এক ইনিংসে রোহিত, কোহলি দুজনকেই বোল্ড করলেন কেউ।

রোহিত-কোহলির ব্যর্থতার দিনে শুরুটা দুর্দান্ত করেন শ্রেয়াস আইয়ার। আফ্রিদির গতির সামনে টপ অর্ডার ব্যাটাররা রীতিমতো চোখে সর্ষে ফুল দেখছিলেন! তবে ব্যাতিক্রম ছিলেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। উইকেটে এসে নিজের প্রথম বলেই রানের খাতা খুলেন। পরের ওভারেই হারিস রউফকে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান। কিন্তু ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারলেন না।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আক্রমণে ছিলন রউফ। পঞ্চম বলটি খানিকটা খাটো লেন্থে ছিল, সেখানে পুল করতে গিয়ে ভুল করেন আইয়ার। মিড উইকেটে ফখর জামানের হাতে ধরা পড়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৯ বলে ১৪ রান। ইনিংসের প্রথম দুই উইকেট শিকার করেছিলেন আফ্রিদি। আর আইয়ারকে ফিরিয়ে উইকেট পার্টিতে আফ্রিদির সঙ্গে যোগ দেন রউফ।

প্রথম পাওয়ার প্লের মধ্যেই প্রথম সারির তিন ব্যাটারকে হারিয়ে যখন ধুঁকছিল ভারত, তখন পাল্লেকেল্লেতে আরও একবার বৃষ্টির হানা। ইনিংসের ১২তম ওভার চলাকালে বৃষ্টি বাধায় দ্বিতীয় দফায় খেলা বন্ধ করতে বাধ্য হন আম্পায়াররা। এরপর ২০ মিনিটের মধ্যেই আবারও মাঠ খেলার উপযোগী হয়ে ওঠে।

খেলা শুরু হলেও স্বস্তি ফেরেনি ভারতীয় শিবিরে। ইনিংসের শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা গিল মাটি কামড়ে উইকেটে পড়ে থাকার চেষ্টা করছিলেন। তবে সেটা বৃথা গেছে। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে রউফের ফুল লেংথ ডেলিভারি ডিফেন্স করতে যান গিল। কিন্তু বলের লাইন ঠিকমতো বুঝতে পারেননি। ইনসাইড এজে হয়েছেন বোল্ড। তার আগে ৩২ বলে ১০ রান করেছেন এই ওপেনার। ফলে ৭৬ রানের মধ্যেই টপ অর্ডারের চার ব্যাটারকে হারায় ভারত।

টপ অর্ডার ব্যাটারদের এমন ব্যর্থতার দিনে দারুণ ব্যাটিং করেছেন ইশান কিষান। এই উইকেটকিপার ব্যাটার ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েও সাবলীল ব্যাটিং করেছেন। গিল যেখানে লম্বা সময় উইকেটে থেকেও থিতু হতে পারেননি। সেখানে ইশান উইকেটে এসেই হাত খুলে শট খেলেছেন। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ৫৪ বল খেলে তুলেন হাঁফ সেঞ্চুরি। এরপর রানের গতি বাড়ানোয় মনযোগ দেন। তাতে সফলও হয়েছেন। ব্যাক্তিগত শতকের দিকেই এগোচ্ছিলেন। তবে কাঁটা পড়েছেন আশির ঘরে।

৩৮তম ওভারের তৃতীয় বলে হারিস রউফকে পুল করতে গেলে বল উঠে যায় সোজা আকাশে। মিড অনে সহজ ক্যাচ ধরেছেন বাবর আজম। সাজঘরে ফেরার আগে ৮১ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৮২ রান করেন ইশান। পঞ্চম উইকেটে ইশান-পান্ডিয়া গড়েছিলেন ১৪১ বলে ১৩৮ রানের জুটি। সেই জুটি ভেঙে পাকিস্তানকে আবারও খেলায় ফেরালেন রউফ।

হার্দিক যখন উইকেটে আসেন তখন ধুঁকছিল দল। সেখান থেকে হার্দিক-ইশানের ব্যাটেই ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। দুর্দান্ত ইনিংস খেললেও সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন হার্দিক। ৪৪তম ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের ওপর গুড লেন্থে করেছিলেন আফ্রিদি। বলে খুব একটা গতি দেননি, আর সেই স্লোয়ারেই বোকা বনেছেন হার্দিক। এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৯০ বলে ৮৭ রান। দলের বাজে সময়ে তার এই ইনিংসটা মনে রাখার মতো। তবে শেষটা হলো আক্ষেপে। মাত্র ১৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন হার্দিক।

ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে হার্দিক যখন সাজঘরে ফেরেন তখন ভারতের সংগ্রহ ২৩৯ রান। তার মানে, শেষের ২৭ রান যোগ করতেই ৫ উইকেট হারিয়েছে তারা। রবীন্দ্র জাদেজা-শার্দুল ঠাকুররা দাঁড়াতেই পারেননি। তাদের ব্যর্থতায় ৭ বল আগেই অলআউট হয়েছে দল।

Leave A Reply

Your email address will not be published.