ঘুরে আসুন নন্দন পার্ক

পার্কে যাওয়া, বিনোদন কার্যক্রম এবং সুবিধাসহ বিস্তারিত তথ্য জানুন!

গ্লোবালবিজ

নন্দন পার্ক বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলায় অবস্থিত একটি বিনোদন কেন্দ্র। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বিনোদনমূলক পার্ক। আশুলিয়া থানায় নবীনগর – চন্দ্রা মহাসড়কের পাশে বাড়ইপাড়া এলাকায় এর অবস্থান। ১৩৫ বিঘা আয়তনের মনোরম এই পার্কটি যুক্তরাজ্য থেকে প্রযুক্তি ও ডিজাইন নিয়ে ভারতের নিকো পার্কের সহায়তায় নির্মিত হয়েছে।

প্রাত্যহিক নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা আর যান্ত্রিকতার বেড়াজালের আবদ্ধতায় জীবন যখন ক্লান্ত ঠিক তখন স্বল্প অবসরের সময়টাকে চিত্তবিনোদনে ভরিয়ে তুলতে ঘুরে আসা যায় কোন পার্ক থেকে। আর তাই আপনাকে পরিপূর্ণ বিনোদনমুখর একটি পরিবেশ দিতে পারে রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলায় গঠিত নন্দন পার্ক। এখানে আছে মানসম্মত বিনোদনের মাধ্যম এবং সুনিশ্চিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বাংলাদেশের বৃহত্তম পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে নতুন ইতিহাসের মাত্রা সংযোজন করেছে নন্দন পার্ক। এ যেন এক সবুজে ঘেরা স্বর্গোদ্যান। নান্দনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত এবং আন্তর্জাতিক মানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির দ্বারা গঠিত এই পার্কটি ছোট থেকে বড় সবার বিনোদনের স্থান হয়ে উঠেছে। এটি প্রাত্যাহিক নাগরিক জীবনের ক্লান্তি মোচন ও চিত্তবিনোদনের তীর্থস্থান।

ব্যস্ততা আর কোলাহলে ঢাকা শহুরে জীবনে এক বিনোদনের সুবিশাল মাএা যোগ করে নন্দন পার্ক ।সুবিস্তৃত সবুজের সমারোহ যেন পর্যটককে প্রশান্তির পরম চাদরে ঢেকে দেয়। তাই বলাই বাহুল্য, বিনোদন-প্রেমীদের ভ্রমনের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে পার্কটির অবস্থান।
আপনিও যদি এই সুন্দর বিনোদন পূর্ণ মুহূর্ত উপভোগ করতে চান তবে অবশ্যই একবার ঘুরে আসবেন নন্দন পার্ক থেকে।

নন্দন পার্ক এর অবস্থান
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সুদূরে সাভার উপজেলায় আশুলিয়া থানার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী বারুইপাড়া এলাকায় নন্দন পার্কের অবস্থান গড়ে উঠেছে। ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে নন্দন পার্কের যাত্রা শুরু হয়। প্রায় ৩৩ একর জমির উপর এটি অবস্থান করছে।

যুক্তরাজ্যের আধুনিক সব প্রযুক্তি ও ডিজাইনকে কাজে লাগিয়ে এবং ভারতের নিকো পার্কের সহযোগিতায় গঠিত হয়েছে নন্দন পার্ক। এছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তায় এ পার্ক টি স্থাপিত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে এই পার্কটি আরো বেশি আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছে এবং হয়ে উঠছে সকলের পছন্দের ভ্রমণ স্থান।

নন্দন পার্কের সময়সূচী:
ভ্রমণপিপাসুরা যদিও তাদের ছুটির দিনকে বেড়াতে যাওয়ার জন্য নির্ধারণ করে থাকেন কিন্তু সারা বছরই নন্দন পার্ক চালু থাকে। শুক্রবার এবং শনিবার সকাল ১০ টা থেকে রাত আটটা এবং রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে।

নন্দন পার্কের বিনোদন কার্যক্রম এবং সুবিধাসমূহ:
সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরী নান্দনিক ডিজাইনের দৃষ্টিনন্দন পার্কটি আন্তর্জাতিক মানের সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

নন্দন পার্ক এ প্রবেশ করলেই আপনি দেখবেন চোখ ধাঁধানো নানা ধরনের রাইনের সমন্বয়। আধুনিক রোমাঞ্চকর এবং আকর্ষণীয় সব রাইডের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে Nandan Park। প্রায় ২৮ টিরও বেশি রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।

চলুন জেনে আসি কিছু উল্লেখযোগ্য রাইড সম্পর্কে-

× ওয়াটার কোষ্টার
× খাটার পিলার
× আইসল্যান্ড
× প্যাডেল বোর্ড
× কিপলিং মুন রেকার
× রক ক্লাইম্বিং
× ওয়েব পুল
× জীপ স্লাইড
× কেবল কার
× বাম্পার কার
× সফট বল ক্যানন
× রেপ্লিং চ্যালেন্জ কোর্স
× স্যুট এন্ড ফেমিলি কার্ড টিউব স্লাইড
× মাল্টি পিলে জোন ইত্যাদি।
মানসম্মত এবং নিরাপদ খাবারের সমন্বয়ে গঠিত ৪ টি ফুড কোর্ট রয়েছে। যেখানে নিজের সংবাদ ও সুবিধা মতো বিভিন্ন খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বেন সবুজ ঘাসের উপর বসে বিশ্রাম নিতে পারেন।

চারিপাশের শান্ত সবুজের সমারোহ আপনার মনকে বিকশিত করবেই।পুরো জায়গাটি নিরাপত্তায় আবৃত। তাই নিশ্চিন্তে ভ্রমন সম্পন্ন করতে পারেন।আরও রয়েছে ১৫০০ ও অধিক গাড়ি ধারনক্ষনতা সম্পন্ন পার্কিং ব্যবস্থা।

এখানে চালু আছে গ্রামীণ সাজে সজ্জিত নন্দন ভিলেজে রিসোর্ট, নন্দন পার্কে দেশের সর্বপ্রথম ও একমাত্র ফাইভ ডি মুভি থিয়েটার চালু হয়। একই সাথে সর্বশেষ প্রযুক্তির ৩৬০ ডিগ্রি ভার্চুয়াল সিনেমা থিয়েটারের ব্যবস্থা রয়েছে।

মুভি প্রেমিকদের প্রধান আকর্ষণ হলো এখানকার পঞ্চমাত্রিক চলচিত্র কেন্দ্রটি। ৫-ডি থিয়েটারে মুভি দেখতে কেমন লাগবে তা আপনি না দেখলে বুঝবেন না। ৫-ডি সিনেমা থিয়েটারে মুভি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো লাগবে। অর্থাৎ সিনেমার দৃশ্যগুলোকে বাস্তবে অনুভব করতে পারবেন। দৃশ্যগুলো মনে হবে যেন বাস্তবে নিজের চোখে দেখছেন। আপনার ভেতর এক জীবন্ত সত্বার অনুভূতি হবে।

এখানে কর্পোরেট সেমিনার, পিকনিকসহ যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের সু-ব্যাবস্থা রয়েছে। পার্কটিতে বিশেষ দিন যেমন বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পয়লা বৈশাখ, ভালোবাসা দিবস,ঈদ, পূজা ও বিভিন্ন উপলক্ষ্যে কনসার্টের আয়োজন করার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও এখানে হকারমুক্ত পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়।

নন্দন পার্ক রিসোর্ট
মূলত নন্দন পার্ক টিতে নন্দন ভিলেজ নামে একটি রিসোর্ট রয়েছে। গ্রামীন প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি নন্দন ভিলেজের আধুনিক কটেজগুলি অত্যন্ত নান্দনিক।গ্রামীন পরিবেশে আধুনিকতার ছোয়ায় কটেজগুলি সত্যিই যেন কর্মব্যাস্ত জীবনের ক্লান্তি ছেদ করে স্বস্তি আনয়নের উদ্দ্যেশ্যেই স্হাপিত।

কিভাবে যাবেন, কি দেখবেন:
নন্দন ভিলেজের প্রতিটা কটেজ খুব সুচারুভাবে সাজানো,আপনি দীর্ঘ সময় যাপন করতে চাইলে অবশ্যই কটেজে উঠতে পারেন। শান্ত সাবলীল পরিবেশ, সর্বাধুনিক সার্ভিস ব্যবস্থা আপনার নজর কাড়বেই। এখানে রয়েছে গাড়ী পার্কিং ব্যাবস্থা এবং সামনে ক্যানভাসের মতো সাজানো সুন্দর বাগান।সবুজ অরণ্য ঘেরা চারিপাশে শুধু সবুজের ঘ্রান। সূর্যাস্তের পরে চারধারে আলোর ঝলকানিতে মন হবে উৎফুল্ল।

নন্দন পার্ক যাওয়ার উপায়
রাজধানী ঢাকার মতিঝিল থেকে নন্দন পার্ক বাসযোগে পৌঁছতে সময় লাগে মাএ দুই ঘন্টা। আবাবিল পরিবহন মতিঝিল থেকে ছেড়ে গুলিস্তান, মগ বাজার, মহাখালি, বনানি, উত্তরা, আশুলিয়া ইপিজেড হয়ে যায়।

হানিফ, সুপার ও আজমেরী বাস সার্ভিস যোগে নন্দনে যাতায়াত করা যায়। এছাড়াও বি আর টি সি, সাভার পরিবহন, ঠিকানা এক্সপ্রেস ইত্যাদি পরিবহনে যেতে পারেন। আর ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে তো কথাই নেই, খুব আরামে ও অল্প সময়ে চলে আসা যায় নন্দন পার্ক এ। সকালের দিকে রওনা করলে আপনি বিনোদন উপভোগ করে খুব জলদি ফিরে আসতে পারবেন।

শেষকথা:
সুস্থ দেহ সতেজ মনের যত্নে বেড়াতে যাওয়ার বিকল্প নেই। প্রতিটি মানুষের রয়েছে সুন্দর একটা সময় কাটানোর অধিকার।তাই প্রিয়জনকে নিয়ে বেড়াতে যান নন্দন পার্ক এ। পারিবারিক বিনোদন মাধ্যম হিসেবে নন্দন পার্ক এর জুড়ি নেই।ব্যস্তময় আর কোলাহলে পুর্ন শহুরে জীবনে নন্দন পার্ক এর সুবিশাল সবুজের চত্বর যেন পর্যটককে স্বস্তির পরম চাদরে ঢেকে দেয়।

বলাই বাহুল্য, বিনোদন-প্রেমীদের গন্তব্যের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে নন্দন পার্ক এর অবস্থান।শুধু দেশের নয় বিদেশি পর্যটকদের ভিড় জমে এখানে। বিনোদন- পীপাসূদেরসস্বর্গোদ্যান তুল্য Nandan Park সত্যিই নান্দনিক।
বিশেষ করে ঢাকা বা আশেপাশে থাকলে এই পার্কটিতে অন্তত একবার ঘুরে আসা উচিত বলে মনে করি। কর্মজীবনের ক্লান্তি মোচন করে অবসরের সঙ্গী হয়ে পার্কটি আপনার জীবনে এনে দেবে নতুন মাত্রা।সকল পর্যটনকেন্দ্রের মতো Nandan Park আমাদের দেশের সম্পদ। তাই এর সঠিক ব্যবহার ও রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব আমাদের সকলের।

Leave A Reply

Your email address will not be published.