অবসরের কথা ভাবছেন হ্যাজার্ড
গত বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন হ্যাজার্ড। ৩২ বছরেই অবসরের কথা ভাবছেন এ বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড। জাতীয় দল ও আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকে বেলজিয়ামের বাদ পড়ার পরই। এবার হয়ত পাকাপাকিভাবেই বুটজোড়া তুলে রাখতে যাচ্ছেন ইডেন হ্যাজার্ড।
বছর চারেক আগেও হ্যাজার্ড ছিলেন ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে। ইংল্যান্ডের চেলসি ছেড়ে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদে। স্প্যানিশ ক্লাবটির ইতিহাসের রেকর্ড অঙ্কের অর্থের দলবদলে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আসাকে সবাই হ্যাজার্ডের সর্বসেরা হওয়ার পদক্ষেপ বলে ধরে নিয়েছিলেন।
তখনও সবাই ভেবেছিলেন, ক্যারিয়ার শেষে হ্যাজার্ড হয়ত ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম কিংবদন্তির আসনে বসবেন। কিন্তু রিয়ালে যোগদানের পর থেকেই চোট, ফর্মহীনতা, ধারাবাহিকতার অভাব মিলিয়ে তার ক্যারিয়ারের পতন শুরু হয়। সেই অধঃপতন এমনই এক বিন্দুতে এসে পৌঁছেছে যে মাত্র ৩২ বছর বয়সেই অবসরের কথা ভাবছেন এ বেলজিয়ান। এ যেন একেবারে স্বর্গ থেকে সোজা পাতালপুরীতে!
মেয়াদের এক বছর বাকি থাকতেই পারস্পরিক মধ্যস্থতায় গত জুনে হ্যাজার্ডের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে রিয়াল মাদ্রিদ। এরপর থেকে কোনো নতুন গন্তব্যে পাড়ি জমাননি এই বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড। মাঝে অবশ্য হ্যাজার্ডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ইন্টার মিয়ামির কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছিল।
তবে ইউরোপ ছাড়ার কোনো ইচ্ছে নেই হ্যাজার্ডের। তাই মার্কিন মুলুক থেকে আসা দলবদলের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। কিন্তু কোনো ইউরোপিয়ান ক্লাব হ্যাজার্ডকে দলে টানতে আগ্রহী না। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএসের বরাত দিয়ে গোল ডট কমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে বুটজোড়া চিরদিনের মতো তুলে রাখতে পারেন হ্যাজার্ড।
![](https://globalbiz24.com/wp-content/uploads/2023/08/IMG_14903-1.jpg)
ফুটবলে হ্যাজার্ডের পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল ফ্রান্সের লিলেতে। ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফরাসি ক্লাবটির জার্সি গায়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ১৯৪ ম্যাচ খেলে ৫০টি গোল করেন এ বেলজিয়ান, পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করান ৫৩টি গোল। ব্যক্তিগত পর্যায়ে দুবার ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের বর্ষসেরা তরুণ আর বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাবও পান তিনি। এছাড়া, ২০১০-১১ মৌসুমে লিলেকে এনে দিয়েছিলেন লিগ শিরোপা।
লিলে অধ্যায় শেষের পর ২০১২ সালে ৩২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে চেলসিতে যোগ দেন হ্যাজার্ড। ক্যারিয়ারের সোনালি সময়টাও তিনি এখানেই পার করেন। ইংলিশ ক্লাবটির হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ৩৫২ ম্যাচ খেলে ১১০টি গোল করার সঙ্গে সতীর্থদের ৯২টি গোলে সরাসরি ভূমিকা রাখেন তিনি।
প্রাপ্তির দিক দিয়েও হ্যাজার্ডের চেলসি অধ্যায়টাও বেশ উজ্জ্বল ছিল। ব্লুজদের জার্সিতে দুটি করে প্রিমিয়ার লিগ ও ইউরোপা লিগসহ মোট ৬টি শিরোপা জিতেছেন তিনি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়ে জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ ও ইউরোপা লিগের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও।
২০১৯ সালের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ১১০ মিলিয়ন ইউরোতে পাঁচ বছরের চুক্তিতে চেলসি থেকে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন হ্যাজার্ড। তবে চোট এবং অধারাবাহিকতায় স্প্যানিশ ক্লাবটির জার্সিতে কখনোই নিয়মিত হতে পারেননি এই বেলজিয়ান। শেষদিকে তো মূল একাদশে জায়গা না পেয়ে অধিকাংশ সময়ে বেঞ্চেই কাটছিল হ্যাজার্ডের।
রিয়াল মাদ্রিদে যোগদানের পর সর্বসাকুল্যে ৭৬টি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন ইডেন হ্যাজার্ড। এ সময়ে নিজে গোল করতে পেরেছেন মাত্র সাতটি। অন্যদিকে, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১২টি গোল। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পর কখনোই স্প্যানিশ পরাশক্তিদের হয়ে কোনো ম্যাচে ৯০ মিনিট খেলতে পারেননি তিনি।
অবশ্য রিয়ালের জার্সিতে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের হিসেবে অনুজ্জ্বল হ্যাজার্ডের দলগত অর্জনের পাল্লা ভারিই ছিল বলতে হবে। লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে জিতেছেন দুটি লা লিগা ও একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ মোট ৮টি শিরোপা।
২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর মাত্র ১৭ বছর বয়সে লুক্সেমবার্গের বিপক্ষে বেলজিয়ামের জার্সিতে ইডেন হ্যাজার্ডের অভিষেক। ১৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে জাতীয় দলের হয়ে ১২৬ ম্যাচ খেলে ৩৩ গোল করেছেন এই উইঙ্গার। স্বীয় নৈপুণ্যে তিনি কেভিন ডি ব্রুইনা, থিবো কর্তোয়া, রোমেলু লুকাকুর সমন্বয়ে গঠিত বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের অবিচ্ছেদ্য এক অঙ্গে পরিণত হয়েছিলেন।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠেয় রাশিয়া বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া বেলজিয়ান দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশও ছিলেন হ্যাজার্ড। তবে চোট আর পড়তি ফর্ম মিলিয়ে শেষদিকে ঠিক চেনা ছন্দে ছিলেন না হ্যাজার্ড। কাতার বিশ্বকাপেও তার পারফরম্যান্স ছিল একদমই নিষ্প্রভ। শেষে টুর্নামেন্ট থেকে দলের বিদায়ের পর তো ছেড়ে দেন আন্তর্জাতিক ফুটবলই।