অর্থনীতি-বাণিজ্য

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কম

গ্লোবালবিজ ডেস্ক

থমকে গেছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ। টিআইএন সার্টিফিকেট, বাৎসরিক আয়করের সনদ ও সুদহার কমানোর কারণে নতুন করে এখাতে কেউ বিনিয়োগ করছেন না। সংকুচিত হয়ে গেছে সরকারের ঋণের উৎস। ফলে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদপূর্তির পর যে হারে ভাঙানো হচ্ছে, সেই হারে নতুন বিনিয়োগ বাড়ছে না। যার কারণে পাঁচ মাসে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ না বেড়ে ঋণাত্বক (নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটা সময় কোনো স্কিমের মেয়াদ শেষ হলে বেশিরভাগ গ্রাহক আবার সেখানেই বিনিয়োগ করতেন। কিন্তু এখন যাদের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে তারা আর নতুন করে এখানে বিনিয়োগ করছেন না। ফলে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়ার পরিবর্তে উল্টো সুদ পরিশোধ করছে সরকার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক এক হাজার ৬১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই পাঁচ মাসে যে পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে তার চেয়ে পরিশোধ করতে হয়েছে অনেক বেশি।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা কড়াকড়িতে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে বিনিয়োগসীমা। তাই মেয়াদ শেষে অনেকেই আর নতুন বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যষ্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ খুব বেশি মুনাফা পাচ্ছে না। এটাও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমার বড় কারণ।

তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে মোট ৬ হাজার ৮৮৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। মুনাফা ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে ৭ হাজার ৮৬৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ফলে নিট বিক্রির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ঋণাত্বক ৯৭৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকায়।

এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৩৪ হাজার ৯৩৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রথম পাঁচ মাসে যা বিনিয়োগ হয়েছে তার চেয়ে এক হাজার ৬১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বেশি পরিশোধ করেছে সরকার।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা থাকে। সরকার তা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির ভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কম

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কড়াকড়ির কারণেই মূলত সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ খুব বেশি মুনাফা পাচ্ছে না। এটাও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমার বড় কারণ। ঋণের বোঝা কমাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে টিআইএন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক হওয়ায় অনেকেই সঞ্চয়পত্রে আগের মতো বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এ বি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, আগে কালো টাকা সঞ্চয়পত্র খাতে বিনিয়োগ হতো। এখন সেটা হচ্ছে না। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে মন্দা দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ চলতি অর্থবছর ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। দুর্নীতি বা কালো টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে। এসব কড়াকড়ির প্রভাবে বর্তমানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে ঠেকেছে।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ।

কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলেও এখনো তা ব্যাংকের তুলনায় বেশি। ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে ব্যাংক আমানতের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদহারের ব্যবধান কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটিকে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জানান, সঞ্চয়পত্র নিয়ে এখন ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। যাদের কারণে এই খাতের সুদহার বাড়িয়ে রাখা হয়েছে তারা এই সুবিধা পাচ্ছেন না। সঞ্চয়পত্রে যে বিনিয়োগ হয় তার ৭০ শতাংশের বেশি ধনীদের। ফলে সরকার যে উদ্দেশে উচ্চ সুদ দিচ্ছে সেই অর্থ যাচ্ছে সরকারি আমলা ও উচ্চ ধনী ব্যক্তিদের পকেটে। সঞ্চয়পত্রের মূল সুবিধাভোগী একটি শক্তিশালী গ্রুপ। তাদের কারণেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো সম্ভব হয় না। আমাদের (পিআরআইবি) একটা গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশের বেশি সঞ্চয়পত্র কেনেন ধনীরা।

admin

Recent Posts

অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন

স্পোর্টসবিজ ডেস্ক আজ (রোববার) আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম পরিণত হয়েছিল নীলের মহাসমুদ্রে। নিজ দেশে এক…

10 months ago

ডলার বিক্রি রিজার্ভে চাপ বাড়াচ্ছে

গ্লোবালবিজ ডেস্ক ডলার সংকট কাটাতে নানা উদ্যোগের পরও দিন দিন তা তীব্রই হচ্ছে। বর্তমানে এই…

10 months ago

তিশার আত্মহত্যা চেষ্টা!

বিনোদনবিজ ডেস্ক ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তানজিন তিশা। তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে গুঞ্জন ওঠে।এমন…

10 months ago

ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টসবিজ ডেস্ক ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অজিদের সঙ্গে প্রোটিয়াদের ঐতিহাসিক টাই ম্যাচটি আজও অমর হয়ে আছে…

10 months ago

অক্টোবরে রপ্তানি আয়ে বড় ধস

গ্লোবালবিজ প্রতিবেদক অক্টোবরে রপ্তানি আয়ে বড় ধস, কমেছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু…

10 months ago

১৮ টাকা বাড়ল এলপিজি সিলিন্ডারের দাম

গ্লোবালবিজ প্রতিবেদক দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ১২ কেজি।সিলিন্ডারের দাম নভেম্বর মাসের…

10 months ago

This website uses cookies.