ব্যাংক-বীমা

খোলা বাজারে ডলার ১১৭ টাকা!

গ্লোবালবিজ ডেস্ক

দেশে ডলারের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে, লাগামহীন বাড়ছে দাম। কমছে টাকার মানও। নানা পদক্ষেপ নিয়েও দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ৫ থেকে ৬ টাকা বেশিতে বিক্রি করছে ব্যাংকগুলো। একইসঙ্গে খোলা বাজারে খুচরা ডলারের দামও বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহক‌দের গুণ‌তে হচ্ছে ১১৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৭ টাকা। যেখানে গত সপ্তাহে এক ডলার ছিল ১১২ থে‌কে ১১৪ টাকা।

রাজধানীর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক এক্সচেঞ্জ হাউজ ও ডলার কেনাবেচার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। অর্থাৎ চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণের জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের নগদ প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১১৭ টাকা পর্যন্ত।

মতিঝিল দিলকুশার এলাকায় খুচরা ডলার কেনা-বেচা করেন আব্দুল হাই। তার কাছে আজকের কেনাবেচার তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজকে ডলার ১১৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১১৭ টাকাও বিক্রি হয়েছে। গতকালও ১১৫ টাকা ছিল।

এখন ডলার সংকট আবার চাহিদা বেশি। এছাড়া সবসময় বৃহস্পতিবার ডলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে। তাই দাম একটু বেশি

আজকে কেন হঠাৎ দাম বাড়লো?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ডলার সংকট আবার চাহিদা বেশি। এছাড়া সব সময় বৃহস্পতিবার ডলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে। তাই দাম একটু বেশি।

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মেটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দামও সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা বেঁধে দেওয়া আছে। তবে নির্ধারিত দামে ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে না বলে অভিযোগ করছেন আমদানিকারক ও উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা।

পোল্ট্রি খাতের সংগঠন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সহ-সভাপতি আনোয়ারুল হক বলেন, সবাই অভিযোগ করছে কোনো কারণ ছাড়াই আমরা ডিম ও মুরগির দাম বাড়াচ্ছি। কিন্তু জানেন ডলারের দাম কত? এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকবেন দেখবেন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু আমি নিজে ইসলামী ব্যাংকে আমদানির জন্য ডলার রেট দিয়েছি ১১৪ টাকা ৫০ পয়সায়। এক ডলারে ৫ টাকা বেশি নিচ্ছে এটা কে বহন করবে? একটা ব্যাংকও নির্ধারিত দামে ডলার দেয় না। এখন দেখি এক রেট আমদানি করলে নেয় আরেক রেট।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ডলারের বাজার ঠিক রাখতে ব্যাংকগুলো নিজেরাই বসে দর নির্ধারণ করছে। এখন যেসব ব্যাংক বাফেদার (বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন) নির্ধারিত রেটের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে তাদের অবজারভেশনের মধ্যে রেখেছি। নিশ্চয়ই অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যাবেন রেজাউল করিম। ১৮ আগস্ট ফ্লাইট। খরচের জন্য নগদ ডলার লাগবে। বৃহস্পতিবার খুচরা ডলারের জন্য কয়েকটি ব্যাংক ঘুরেছেন কিন্তু কিনতে পারেননি। পরে খোলা বাজার থেকে তাকে ১১৭ টাকায় ডলার কিনতে হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ওপর। এই দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।

সবশেষ নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিকারকদের প্রতি ডলারের দাম ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী ডলার ১০৯ টাকা। এ ছাড়া আমদানিতে ডলারের সর্বোচ্চ দর ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন হচ্ছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা।

বাজারে ডলার সংকট কাটাতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিক ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল। আর আগের অর্থবছরে ( ২০২১-২২) বিক্রি করেছিল ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ধারাবাহিক ডলার বিক্রির ফলে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সঞ্চয় করা রিজার্ভ এখন ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

ডলার সংকট আর ধারাবাহিক বিক্রির কারণে কমছে দেশের রিজার্ভ। সবশেষ ২৬ জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের রিজার্ভ আছে ২ হাজার ৯৩৮ কোটি ডলার (২৯ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থার (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী- আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দেশে প্রকৃত রিজার্ভ থেকে ৬২৩ কোটি ৭৬ লাখ ডলার বাদ দেওয়া হয়েছে। সেই প্রকৃত রিজার্ভ নেমে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারে। প্রতি মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার হিসাবে এ রিজার্ভ দিয়ে ৪ মাসের মতো আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ।

সারা বিশ্বে প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬) অনুযায়ী, রিজার্ভ গণনায় বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত বিভিন্ন তহবিলের পাশাপাশি বিমানের জন্য প্রদত্ত ঋণ গ্যারান্টি, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুদ্রা বিনিময়, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া ঋণ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে আমানত এবং নির্দিষ্ট গ্রেডের নিচে থাকা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত নয়। এসব খাতে বর্তমানে রিজার্ভ থেকে ৬৩৭ কোটি ডলার দেওয়া আছে, যা বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়েছে।

admin

Recent Posts

অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন

স্পোর্টসবিজ ডেস্ক আজ (রোববার) আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম পরিণত হয়েছিল নীলের মহাসমুদ্রে। নিজ দেশে এক…

10 months ago

ডলার বিক্রি রিজার্ভে চাপ বাড়াচ্ছে

গ্লোবালবিজ ডেস্ক ডলার সংকট কাটাতে নানা উদ্যোগের পরও দিন দিন তা তীব্রই হচ্ছে। বর্তমানে এই…

10 months ago

তিশার আত্মহত্যা চেষ্টা!

বিনোদনবিজ ডেস্ক ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তানজিন তিশা। তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে গুঞ্জন ওঠে।এমন…

10 months ago

ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টসবিজ ডেস্ক ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অজিদের সঙ্গে প্রোটিয়াদের ঐতিহাসিক টাই ম্যাচটি আজও অমর হয়ে আছে…

10 months ago

অক্টোবরে রপ্তানি আয়ে বড় ধস

গ্লোবালবিজ প্রতিবেদক অক্টোবরে রপ্তানি আয়ে বড় ধস, কমেছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু…

10 months ago

১৮ টাকা বাড়ল এলপিজি সিলিন্ডারের দাম

গ্লোবালবিজ প্রতিবেদক দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ১২ কেজি।সিলিন্ডারের দাম নভেম্বর মাসের…

10 months ago

This website uses cookies.